ধুলো ঝেড়ে, সোঁদা ঘাসে পেতেছি মাদুর ...

সৌজন্যের অভ্যাস আর শান্তিতে বিশ্বাস থাকলে যেকোনো মহল্লার যেকোনো প্রাপ্তমনস্ক ছেলে বা মেয়েই এই মাঠে খেলতে পারবে। খেলার ডাক না দিতে পারলেও অংশগ্রহণের জন্য আসতে কারো জন্য কোনো বাধা-নিষেধ বা রেষারেষি নেই। হোক খেলা, তবু সব খেলারও তো কিছু নিয়মনীতি আছে, তাই না? স্বাধীনতার একটা যমজ ভাই আছে, নাম দায়িত্ব। সেমতে, নীতির ওপর আস্থা রাখা গেলে নিয়মের ভার নিশ্চয়ই বেশি একটা কঠিন হবে না। আর, প্রয়োজনে কখনো বল/ব্যাট/গার্ডার/গ্লভস জাতীয় জিনিসপত্তর খেলোয়াড়ের নিজের ঘর বা গাঁট থেকে নিয়ে আসতে হ'তে পারে। তবে, সুঁই-আলপিন-ছুরি-চাকু-ইট-পাথর-ডাণ্ডা বহন ভীষণভাবে নিষিদ্ধ!

বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

[মহরতপর্ব] পৃথিবীতে আমার কেবল একজন পাঠক থাকলেও আমি তাতে দায়গ্রস্ত

১.
অ্যাতো ব্যস্ততার অভ্যেসেও যে মানুষ এমন অলস হতে পারে, তার প্রমাণ মিলবে আমার কাছে। বাধ্যতামূলক (জীবিকার) কাজের বাইরে আজকাল যেটুকু সময়ও বা জোটে, সেই পুরোটাই কীভাবে কতোটা নিকর্মাভাবে কাটিয়ে ফতুর হয়ে বা থেকে যাওয়া যায় আগে-পরের বাকি সময়গুলোর ক্লান্তির দোহাই দিয়ে, কেউ চাইলে সেটা আমাকে দেখলেই সবচে’ ভালো শিখতে পারবে। এজন্যই, কর্ম আর ক্লান্তির রক্তসম্পর্ক যতোই প্রাচীন পরিচিত আর স্বীকৃত হোক না কেন, আমাকে যতোটুকু কর্মী দেখায়, তার চেয়েও বেশি দেখায় ক্লান্ত।
'দেখায়'-ই বা কেন বলছি! এটা তো কোনো দেখার ভুল বা ইল্যুশন না, আমি আসোলেই তাই। মাঝেমধ্যে বড়জোর শিবের গীত শুরু করে তার প্রথম অন্তরা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই ক্লান্ত হয়ে ধান ভানা ফেলেই আমি গান গাইতে গাইতে বাড়ি চলে যাই, খালামণি! 'হাজার বছর ধরে' পৃথিবীর মড়া গাছতলায় খাড়া থেকেই 'আমি ক্লান্ত প্রাণ এক', চারিদিকে সব আর সবাই সকর্মক 'সমুদ্র সফেন'। কর্মজয়ের সিদ্ধির কথা তো বাদই দিলাম; ভ্যানিটি ব্যাগে, লিপস্টিকের রঙে কিংবা ছোট জামার ভাঁজে করে আমার জন্য দু'দণ্ড শান্তি নিয়েও কেউ যদি নীরবে এসেও থাকে কখনও কোনোদিন, তবে সে-ও এই চোখ-বন্ধ জিন্দালাশ আমাকে দেখেই আস্তাগফিরুল্লাহ্ জপতে জপতেই নিশ্চয়ই ফি-সাবিলিল্লাহ্ হয়ে গ্যাছে! আমার কালনিদ্রা তবু যেন কোনো সকালে কি কোনো কালেই আর ভাঙে না! কতো রবি জ্বললো পিঠের এক বিঘত্ উপরেও, তবু আমার ব্যক্তিগত শীত-জ্বরার ওই ক্ষীণ চাপা হুহুকার আর গ্যালোই না কোনোদিন। আমি "নতমুখে মেনে" নিয়ে "অভিশাপ, সাদা হিমঘর জুড়ে" শীতঘুমে, সব মৌসুমে। "আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে, আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা, গতিহীন ধারা"।

২.
আমি হলফ করিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি, যে-- আমি সাইফুল আকবর খান (সাং- নেত্রকোণা, বাংলাদেশ) বাংলাসাহিত্যের কোনো মহীয়ান মহীরুহ, মধ্যম বৃক্ষ-গুল্ম কিংবা উঠতি কোনো প্যাঁচানো লতা-মাত্রও নহি।
আমি আরো হলফ করিতেছি, যে-- বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের কোনো স্ফুলিঙ্গ প্রতিভা কিংবা দাবানল-প্রতিম কোনো নেতৃব্যক্তিও আমি নহি।
আমি আরো সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি, যে-- নিতান্তই পানাডোবার-নিদেন-জলের-মাছ এই গণ্ডমূর্খ আমি কোনো এক ঐতিহাসিক অতীতকালে যেই মহা আয়তনে ব্লগিংয়ের নামে ব্যক্তিগত প্যাঁচালি চালাইবার চেষ্টা করিয়াছিলাম স্বীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ মাপে, সেই আয়তনের প্রতি -- এবং সেইখানকার যেই কিছুমাত্র ব্যক্তি আমাকে এবং আমার অল্পবিদ্যাকে ভয় না করিয়া কিংবা মনে অল্প ভয় করিয়া হইলেও অন্তত বিতৃষ্ণ বিমুখ না হইয়া আমাকে স্নেহে-ভালোবাসায়-প্রশ্রয়ে তাহাদিগের ভালো ভালো বাসার বসার ঘরে পর্যন্ত উঠাইয়া নিয়াছিলেন আর এমনকি এই নীরব ক্রান্তি-ক্লান্তিকাল পর্যন্তও তাহাদিগের যথেষ্ট নিকটে আমাকে হাঁটাচলা করিবারে অনুমতি-সম্মতি প্রদান করিয়া যাইতেছেন, তাহাদিগের সবার প্রতিও -- আমার সত্যিকারের ঋণ রহিয়াছে মোটা অঙ্কে। এমনকি, বর্তে যাওয়া সেই হঠাত্-কালের মাত্র কিছুকাল পরেই সেই আয়তনে লিখিবার কিংবা মিথস্ক্রিয়ায় যাইবার রুচি আর না করিবার একাধিক বড় এবং ভালো কারণও আমাকে সেইখানকার যাহারা উপহার দিয়াছিলেন, তাহাদিগের প্রতিও প্রকারান্তরে আমার কৃতজ্ঞতা রহিয়াছে ব্যক্তিগত পর্যায়েও, কারণ সেই জ্ঞানী-গুণী মহারথী ব্যক্তিদিগের দেয়া সেই শিক্ষাও যে আমার বাকি চিরজীবনের কিছুমাত্র চিরস্থায়ী ব্যবহারিক প্রজ্ঞা-অভিজ্ঞতা-বিচক্ষণতার অংশ হিসাবে টিকিয়া যাইবে, তাহাতে কণামাত্র সন্দেহের অবকাশ কোথাও খুঁজিয়া মিলিবে না।

৩.
বেশ কিছুদিন ধরেই একটা দরকার অনুভব করছিলাম নিজেকে আরেকবার মশারির বাইরে টেনে এনে যতোই-ছোট-হোক একটা সমষ্টির সমক্ষে দাঁড় করানোর, এটাও এই গরিবের নিজের ন্যূনতম প্রাণ-প্রমাণের স্বার্থেই। হাই তুলতে তুলতে, লো থাকতে থাকতে, সেই আড়মোড়ায় মোড়া লেজঘুম আর ভাঙছিলোই না আগেও বলা সেই সাম্প্রতিক স্বভাবদোষে। জীবনে এখনও (বা তখনও!) পর্যন্ত টিকে যাওয়া এক চিমটি ইতিবাচকতার সুরেই শক্তি দিয়ে-নিয়ে, অনেক কিছুকে আর অনেককে বন্দনা করে একটা এপিক লেখার মাধ্যমে নতুন আরেকটা "জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয়" শুরুর ব্যাপারেও জোরালো ভাবনা চলছিলো "আধো আলো-ছায়াতে, কিছু ভালোবাসাতে"। তার মধ্যেও, বড়ই সম্প্রতি, আমেরিকার পরে দ্বিতীয়মাত্র 'সব সম্ভবের দেশ' বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ চতুষ্পদ প্রজাতির কাছ থেকে আমি পেলাম জীবনের চতুর্থ মস্ত বড় ধাক্কা। বেচারা 'সুকুমার'-এর নিদারুণ করুণ গোহারা ব্যর্থতায় আরো একবার বিষমভাবে থই হারিয়ে ফেললাম শুভ-অশুভ, মন্দ-ভালো, সাদা-কালোর মিল-অমিলের অতল হতাশ কুবাতাসে। তাই, পরিকল্পনা পর্যন্ত প্রায় পৌঁছে গিয়েও সাপলুডু'র সাপের পেটে ঢুকে আবার বিষপাতালের স্বপ্নকল্পনায় ফিরে গিয়েছিলাম, আবার তলিয়ে, আবার ঝিমিয়ে, আবার ঘুমিয়ে ...

৪.
তো, বলছিলাম কি, একবার যে জাগলাম দীর্ঘ অবশেষে, অন্তত ব্যক্তিগত-তে যে দাঁড়ালাম উঠে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। হাততালি লাগবে না বাচ্চালোক! জোড়াতালিতে কোনোমতে একটা গরিব মাঠ বানিয়েছি মাত্র, ন্যূনতম স্বাস্থ্যকর একটা নিদেন নিজ-জীবনের লোভে। দেশ-জাতি-সমাজ-রাজনীতি-জীববৈচিত্র্য-বিজ্ঞান-পরিবেশ-ভূগোল বিষয়ক কোনো মহান বাণী, তত্ত্ব কিংবা তথ্য কিছুই এই মাঠে পাবেন না -- শুধু আমার ব্যক্তিগত্-ই যদি লেখা থাকে পাতার পরে পাতায় -- সেই গরল স্বীকার করে নিয়েই যে বা যারা শুধুমাত্র আমার আবদারের আহ্লাদেই ফিরে ফিরে আসবেন ছোট্ট এই প্রত্যন্ত অন্যপুরে, সে বা তারাই সেই সহৃদয়তার কল্যাণে মাঝেসাঝে শুনেই যেতে থাকবেন আমার টুকটাক আলতো ডাকের ঢাক, আর বাকিরা সময়ের সাথে সাথে নিশ্চয়ই তাদের নিজ গুণে এমনিতেই মুক্তি পেয়ে আরামে উড়ে চলে যাবেন আমার যন্ত্রণাভোক্তার তালিকা বা সীমানার বাইরে। ছক্কা!

৫.
সুখে অসুখে, ভাবে অভাবে, লেখা হলে দেখা হবে তবে। আশা করি উল্টোটাও হবে-- দেখা হলে লেখা। যদি বা যদ্দিন একজনও সাথে জেগে থাকবেন আমার শিশির-দূর্বা মাঠে, গুণগানে কান ভারি না করলেও, সাঁঝের সোনা ধূপছায়ায় আর ভোরের ভেজা আবছায়াতেও গুনগুন গান শোনাতে জেগে থাকবো আমিও-- কথা দিলাম। :-)

[ফিতা কাটার এই শুভক্ষণে, সুহৃদ, আপনিও যদি আপনার দুয়েকটা কথা রেখে দিয়ে যান আমার জন্য, অকৃতবিদ্য আমি তাতে খুব খুব কৃতার্থ থাকবো। খুব ধন্যবাদ।]

১৮টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

শুভযাত্রার শুভক্ষণে শুভকামনা!

পান্থ রহমান রেজা

রূপদর্শী বলেছেন...

লেখালেখির ময়দানে শুভ প্রত্যাবর্তন! নিয়মিত লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
মামুন হক

নুশেরা তাজরীন বলেছেন...

শুভেচ্ছা, অভিনন্দন! ফুলে-ফসলে ভরে উঠুক লেখার মাঠখানি। চমতকার স্নিগ্ধ হয়েছে ব্লগস্পট। লেখাটি, বিশেষ করে শেষ দুটি অনুচ্ছেদ, মন ছুঁয়ে গেলো!

অনার্য সঙ্গীত বলেছেন...

আহা! আবার সেই নিঃশব্দ-সশব্দ শব্দের আর অক্ষরের অবলীল খেলা আর খেলোয়াড়ের দেখা মিলবে...
খুশি হবার আর কোনো কারণের তো দরকার নেই...

নামহীন বলেছেন...

বাহ ! শুভকামনা...এবং অনেক প্রত্যাশা...
# চমন

Unknown বলেছেন...

দারুণ তো! শুরু হোক তবে যাত্রা আবার... :)

মুজিব মেহদী বলেছেন...

লেখার মাঠে খেলা ভালো জমুক।

নাজনীন খলিল বলেছেন...

খুব ভাল লাগল এই ফিরে আসা।সব কিছু শুভ এবং সুন্দর হোক।

saif বলেছেন...

খান সাব, অনেকদিন পর আপনে গর্ত থিকা বাইর হইছেন দেইখা মনে একটু হইলেও শান্তি পাইলাম। আপনার আন-বায়াসড্‌ মন্তব্যগুলা মিস করি অনেকদিন যাবত, আর মনে মনে খুঁজে বেড়াই আপনারে। লেখার কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন মনে করি না, আর গঠনমূলক সমালোচনা করা আমার কাজ না। খালি এইটুকু বলতে পারি, অনেক মিস করতেছিলাম, আবারো পাবো আপনার মাঠে হাডুডু গোল্লাছুট খেলার সুযোগ।

আর ব্লগস্পটের লেআউটটা দারুণ হয়েছে, সবুজে -শান্তিতে অনন্য। ফিতা কাটা শেষ, এইবার দূর্বার গতিতে লেখা আসুক

Rezwan Razzaq বলেছেন...

বাহ! আবার শুরু করেছেন লেখা তাহলে। কিপ শেয়ারিং। আর প্রোফাইলটাও তো ভালই বানিয়েছেন :D

Ripon বলেছেন...

Sundor chesta. Appnar chestay haath bariye dite chai

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

@ পান্থ! অনেক শুভ ধন্যবাদ। :-)

@ মামুন ভাই! ধন্যবাদ বস। :-) দ্যাখা যাক, কী দাঁড়ায় আমার অবস্থা! :S

@ নুশেরা'পু! কী বলবো! অ্যাতো সুন্দর কমপ্লিমেন্ট আর উইশ- অনেক ছুঁয়ে দিলো আমাকেও। আন্তরিক ধন্যবাদ আর ঋণীবাদ। :-)

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

@ অনার্য! তুই নিজেও তো এখানে বলতে এসে বেশ শব্দক্রীড়ার ছাপ দিয়ে গেলি। অনেক খুশি হইছি ভাই। :-)

@ চমন! এখান পর্যন্ত তোর কমেন্ট দেখে বেশ চমকিত আর প্রীত বোধ করেছি, সত্যি! দ্যাখা যাক, আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকবে নিশ্চয়ই। :-)

@ শিমুল! হোক। :-) অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

@ মুজিব ভাই! খেলায় উত্সাহ আর শুভকামনার জন্য কৃতজ্ঞ ধন্যবাদ রইলো। সাথে থাকুন। :-)

@ নাজনীন আপা! অনেক ভাল্লাগলো আপনার মন্তব্য আর শুভাশীষ পেয়ে। আপনিও শুভ সুন্দর নিয়ে ভালো থাকেন, সাথে থাকেন। :-)

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

@ সাইফ ভাই! যেভাবে বললেন বস, বেশ প্যাম্পারড আর অনারড বোধ করছি! মন্তব্য-টন্তব্যের মধ্যে তো আর আমি নাই ভাই। ওসব থেকে কোথাও আর কিছু আশা করি না আমি। আর আমার এই ব্লগের তো ওরকম কোনো মহত্ বা বড় কোনো উদ্দেশ্যই নাই। ব্যক্তিগততেই যদি সাথে থাকেন, অনেক ভাল্লাগবে আমার। অনেক ধন্যবাদ, আপনার শুভ শংসা আর শুভকামনার জন্য। ভালো থাকেন আপনিও।

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

@ মন্টি! অনেক ধন্যবাদ। বেশ ভালো লাগলো তোমার কমেন্ট আর কমপ্লিমেন্ট পেয়েও। সাথে থাকো। :-)

@ রিপন! গ্রেট! ধরে নিলাম তোমার বাড়ানো হাতটাও। :-) অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা, তোমার জন্যও।

জুয়েইরিযাহ মউ বলেছেন...

যদি বা যদ্দিন একজনও সাথে জেগে থাকবেন আমার শিশির-দূর্বা মাঠে, গুণগানে কান ভারি না করলেও, সাঁঝের সোনা ধূপছায়ায় আর ভোরের ভেজা আবছায়াতেও গুনগুন গান শোনাতে জেগে থাকবো আমিও-- কথা দিলাম।"

- দাদাভাই, কথাটুকু রাখা হবে এটুক প্রত্যাশায় ভর করেই মাঝে মাঝে এখানে আমারও আসা হবে তবে...
শুভকামনা নিরন্তর... :)

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

:-) সেটাই। এখনও তেমন ভালো অবস্থা না। তবু, সেই আশাবাদের চাষাবাদই করবার চেষ্টা করছি।
অনেক ধন্যবাদ মউবনু! ভালো থাকো, সাথে থাকো।