ধুলো ঝেড়ে, সোঁদা ঘাসে পেতেছি মাদুর ...

সৌজন্যের অভ্যাস আর শান্তিতে বিশ্বাস থাকলে যেকোনো মহল্লার যেকোনো প্রাপ্তমনস্ক ছেলে বা মেয়েই এই মাঠে খেলতে পারবে। খেলার ডাক না দিতে পারলেও অংশগ্রহণের জন্য আসতে কারো জন্য কোনো বাধা-নিষেধ বা রেষারেষি নেই। হোক খেলা, তবু সব খেলারও তো কিছু নিয়মনীতি আছে, তাই না? স্বাধীনতার একটা যমজ ভাই আছে, নাম দায়িত্ব। সেমতে, নীতির ওপর আস্থা রাখা গেলে নিয়মের ভার নিশ্চয়ই বেশি একটা কঠিন হবে না। আর, প্রয়োজনে কখনো বল/ব্যাট/গার্ডার/গ্লভস জাতীয় জিনিসপত্তর খেলোয়াড়ের নিজের ঘর বা গাঁট থেকে নিয়ে আসতে হ'তে পারে। তবে, সুঁই-আলপিন-ছুরি-চাকু-ইট-পাথর-ডাণ্ডা বহন ভীষণভাবে নিষিদ্ধ!

বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০

[হিজরতপূর্ব] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সং ভং চং (রঙ্গমঞ্চ চর্চাকড়চা ০১)

“জ্ঞান ও ক্ষমতা সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ভাষাবাহিত অভিব্যক্তি সর্বদাই স্ববিরোধী। ভাষার মধ্য দিয়ে দ্যোতিত অর্থ একমাত্র সত্য নয় বলেই ভাষা নিজেকেও নাকচ করতে থাকে। আর তাই ‘লোকনাট্য’ পরিভাষাটি হয়ে ওঠে প্রশ্নবিদ্ধ। কেন না এই নামকরণের নেপথ্যে সঞ্চালিত থাকে আধুনিকতাবাদী ঔপনিবেশিক নাগরিক মনোভঙ্গির হেজিমনি, কিংবা সম্প্রসারিত ও সুনির্দিষ্ট অর্থে- জ্ঞান উত্পাদন সংক্রান্ত ক্ষমতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ জ্ঞান, ভাষা ও ক্ষমতার পারস্পরিক নিবিড় ঘনিষ্ঠ মিতালীর জটিল ও বহুস্তরায়িত এই বাস্তবতার মধ্যেই বিদ্যমান। তাই, ‘লোকনাট্য’র প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ও অনুশীলনে ধ্যানস্থ হতে গিয়ে
আমরা ‘লোকনাট্য’ পরিভাষাটিকে একই সঙ্গে গ্রহণ করে নিচ্ছি, আবার প্রত্যাখ্যানও করছি। এই স্ববিরোধিতা কপটতা নয়, বরং জিজ্ঞাসার মৌলিকতা সংক্রান্ত তারুণ্যের আকুতি ও জ্ঞানস্পৃহা।
......................
......................
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক এক মেরুকৃত পুঁজিবাদী পৃথিবীর সর্বগ্রাসী বিশ্বায়িত বাস্তবতায় সৃষ্টি হয়েছে ইসলামী জঙ্গিবাদের মতো নতুন ফেনোমেনা বা প্রপঞ্চ। এক বৈষম্যময়, অনিশ্চিত, অ্যাবসার্ড ও স্নায়ুরোগগ্রস্ত পৃথিবীর এই কালোবেলায় আমরা সং সেজেছি। আত্নকেন্দ্রিক বিপন্নতার বিপরীতে আমরা যৌবনদীপ্ত বহুজনের জীবনোত্সবে আজ মত্ত হয়েছি। হাস্য, তামাশা আর কোলাহলের অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে আমরা ভাঁড়-বিদূষক হয়ে এসেছি চিত্তের মুক্তির আকাঙ্খায়। কেন না ক্রীতদাসেরা কখনও হাসতে পারে না। আর হাসি মানুষের মুক্ত আত্নার প্রতিধ্বনি।
হে দৃশ্যপিপাসু মানবতা, তোমাদের নির্মল মনে চিত্রিত হোক আগামীর ইউটোপিয়া।”

এভাবেই শুরু এবং শেষ হয়েছে ‘সং ভং চং’এর ব্রোশিয়ারের লিটারেচার। আমি এটা পড়েছি ব্যতিক্রমীভাবে শো শেষে বাসায় ফেরার পরে। এই ব্যত্যয়ের কারণটা একটু পরেই বোঝা যাবে, নাটকটি দেখার সংগ্রামী প্রয়াসের বিবরণটা শুনলেই। এখন যা বলতে চাচ্ছি, তা হ’লো- এই উদ্ধৃত অংশটিতে আমার মনে হয়েছে যে কাজটির পুরো দৃষ্টি এবং ভঙ্গিটাই বর্তমান মূর্তিমান আছে খুব সোচ্চার সুন্দরভাবে। তাই, আমার এই ছোট্ট লেখাটিতেও তুলনায় এত বড় একটা অংশ এভাবে চোথা মেরে তুলে দিলাম। জানি না ঠিক- ওই লেখাটি প্রযোজনা-সংশ্লিষ্ট কার চয়ন, হ’তেও পারে প্রযোজনা পরিকল্পক ও নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ স্যারের, আবার হঠাত্ না-ও হ’তে পারে। তবে, আমার উচ্ছ্বাস আর আরামের ব্যাপারটি এখানে এই, যে- নাটকটি দেখার পর এই ব্যতিক্রমী সুলিখিত কেজো সাহিত্যটুকু প’ড়ে আমার কাছে ব্যতিক্রমী পর্যায়েই সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে গোটা কন্টেন্ট, পারফরম্যান্স, তার আচরিত শিল্পভঙ্গি আর এদের জড়িতির সকল অর্থস্বার্থ।

মূলত পাঠ্যক্রমিক নাট্যচর্চার অংশ হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তর এবং চতুর্থ সেমিস্টার-এর লোকনাট্যভিত্তিক প্রযোজনা ‘সং ভং চং’ এক টানা সপ্তাহের সপ্তসন্ধ্যায় (১ থেকে ৭ অগাস্ট, ২০০৯) মঞ্চায়িত হ’লো বিভাগেরই মিলনায়তন ‘নাটমণ্ডল’-এ।

প্রায় সহস্র বছর ধ’রে চর্চিত, মূলত টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ এলাকার ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্যাঙ্গিক ‘সং’ বা ‘সংযাত্রা’ নিয়ে ঢাকার নাগরিক মঞ্চে আগেও কাজ হয়েছে। সংশিল্পীদের শিল্পজীবনক্রান্তি নিয়ে প্রসেনিয়াম মঞ্চেই আরণ্যক নাট্যদলের অনবদ্য প্রযোজনা ‘সংক্রান্তি’র প্রেক্ষিতে সং আঙ্গিকটি এবং সেই নাটকটির ওপর আমিই আট-নয় বছর আগেও একটি ইংরেজি রিভিউ লিখেছিলাম, আমার জানামতে বাংলাদেশের প্রথম ওয়েব পোর্টাল মতামত.কম-এ। গত বছরও আমি একবার ওই পোর্টালে ঢুকে আমার ছয়-সাত লেখাগুলোতে নস্টালজিক চোখ বুলিয়েছিলাম। কিন্তু এই প্যাচালের সাথে দুঃখটা হ’লো- এই লেখায় ওই সবিস্তার ‘সং’নামার একটা লিংক দিতে চেয়ে এবার খুঁজে দেখি- সেই পোর্টাল-টা আমাদের কতোজনের ওইসব লেখাজোখা-সহই মর্টালিটির জলে ডুবে উধাও হয়েছে (হায়! আমি অথচ ভেবেছিলাম অগোছালো গরিব লেখকেরও কয়টা ছোটবেলার লেখাসমেত ওই আর্কাইভ-টা অন্তত আমাদের পি.সি.-দের চেয়ে নিরাপদ এমনকি চিরস্থায়ী হবে!)।

তো, সেই গত ‘সংক্রান্তি’র এই কতোকাল পরে আমার আরেকবার সং দেখা হ’লো এই ‘সং ভং চং’-এর একেবারে সপ্তম সন্ধ্যায়। সপ্তাহের মধ্যেই এক নাট্যবন্ধুর কাছ থেকে জেনেছিলাম, তবে অফিসের পরে সময় করতে পারিনি একদিনও। আমার রক্তের গ্রুপ যেখানে টি (থিয়েটার) পজিটিভ, সেখানে নাটকের প্রতি আমার দুর্বলতা নিয়ে বেশি বানান ক’রে বললে বাড়াবাড়ি বাতুলতাই হবে। তার মধ্যে আবার বাংলার লোকনাট্যের ঐতিহ্যবাহী অনন্যসমৃদ্ধ আঙ্গিকগুলোর প্রতিও আমার আকর্ষণ আরো একটু বেশি বেশিই। মাঝেমধ্যে নাটমণ্ডলে নাটক দেখা আমার হয়, তবে ওই যে, সবকিছুর পরে নিয়মিত সময় করতে পারি না ব’লে সব প্রযোজনা দেখতে যে পারিই, তা নয়। তবু, সং ব’লে কথা! এটা কোনোভাবেই মিস করতে পারতাম না।

শুক্রবারের আগে ফুরসত তো পেলামই না। ভার্সিটি আর নাটকপাড়ার আশপাশের ছেলেমেয়েদের কাছে এমন লোভনীয় একটা প্রযোজনা দেখতে শেষ সন্ধ্যায় যাওয়ার ফলে বেগও পেতে হয়েছে অনেকই। ঢাকার বাইরের উজান-উন্নত গ্রাম উত্তরা থেকে নাটমণ্ডল পৌঁছাতে দেরিও হয়ে গিয়েছিল একটু। নাটক শুরু হ’তে তখনও যদিও আরো আধঘণ্টা সময় বাকি ছিল, তবু দেখি টিকিট সব ওরই মধ্যে শেষ! বিপন্ন বেচারা হয়ে আরো কয়েকবার কাউন্টারের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছি গিজগিজ নাট্যতৃষ্ণাতুর আবালবৃদ্ধবনিতার মধ্যে। আমার মতো আরো কয়েকটা কেস আশপাশে জমা হয়েছে বুঝতে পারার পর একবার কাঁধে আর কণ্ঠে নেতৃত্ব নিয়ে জিজ্ঞেস ক’রেই বসলাম- কোনো একটা ব্যবস্থা করা যাবে কি না, দাঁড়িয়ে থেকেও বা ফ্লোরের ধূলোয় ব’সেও দেখতে আপত্তি নেই (যদিও শেষ এমন বেশি সংগ্রামে নাটক দেখেছিলাম তা-ও পাঁচ-ছয় বছর হয়ে থাকবে। ঢাকা থিয়েটারের উত্সবে কলকাতার ‘নান্দীপট’র সেই “মৃত্যু না হত্যা” নাটকটির কথাও মনে পড়তে থাকে ওই কষ্ট অবসরেই)। ওমা! কী ভালো, কাউন্টারের ওই রাগী-চেহারার মেয়েটা! বললো- একটু ওয়েইট করেন, দেখছি ব্যবস্থা করা যায় কি না। আশাবাদী অপেক্ষমান ভিড় যেমন বড় আর ভারি হচ্ছিল একদিকে, তেমনই অন্যদিকে টিকিট-পেয়ে-বৈধ দখলদারদের কিউ-ও লম্বা হ’তে হ’তে সাপের মতো পেঁচিয়ে যাচ্ছিল। আশার বাণী নিয়ে এলো সেই রাগী-চেহারাটার আরেক বন্ধু। ভেতর থেকে কিছু না-লেখা বাড়তি টিকিট এনে ‘স্ট্যান্ডিং’ বোঝাতে আসন-সারির জায়গায় ‘St’ লিখে লিখে আমাদের কাছে অনুমতি বিক্রি করলো সেই খুব-কাঙ্খিত প্রদর্শনীটি দেখতে পারার। আমরা জনা-বিশেক উন্মুখ দর্শক খুশি হয়ে ব’র্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখারই টিকিট কিনলাম টপাটপ।

আপনি যতোটুকু ভাবছেন, ভিতরের অবস্থা তার চেয়েও সংগ্রামী ছিল, কারণ অ্যারেনা ঘরানার (চারদিকে দর্শক, আর মাঝখানে নাটক) মঞ্চব্যবস্থায় দর্শক-সারিগুলোর মাঝে মাঝে যে চারটা কোনা বেরিয়েছিল, সেগুলোয় দাঁড়াতে পারবো ব’লে ভাবছিলাম যদিও, গানের সাথে দোহরানোর জন্য সেখানে নাট্যকলা বিভাগের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের চার-চারটে দল দাঁড়ালো ব’লে আমাদের মতো সংগ্রামী দর্শকদেরকে দাঁড়াতে হ’লো দর্শকের শেষ সারির পিছনে ফ্লোরে, অর্থাত্ উঁচু প্ল্যাটফর্মে চেয়ারে ব’সে থাকা সামনের সবার ঘাড়ের ফাঁকেফুঁকে যদি কিছু দেখতে পারি দেখলাম, নয়তো আমার কাছে সেটা নিছক রেডিও-নাটক হয়ে গেলেও কারো কিছু করার নেই। (কু)বুদ্ধি ক’রে দেয়ালে পিঠ (আসোলে শুধু কোমরই) দিয়ে তার থেকে ফুট দুয়েক সামনের বেদীতে পা ঠেঁকিয়ে বাঁকা হ’তে হ’তেই দেখলাম পুরোটা। দুই ঘণ্টারও বেশি দৈর্ঘ্যের সং দেখতে দেখতে নিজের কোমরে-উরুতে-হাঁটুতে ব্যথা তো ধরলোই, এমনকি ছয়-সাতজনের ওজন সইতে না পেরে একবার আমার পায়ের নিচ থেকেই ভেঙে স’রে পড়লো চৌকিটার ধারের চিরল-কাঠটি। সৃষ্টি দেখতে অনাসৃষ্টি ঘটালেও পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই কুকর্মফলে ভাগ্যিস কেউ শাসায়নি এসে!

নৃ-ইতিহাস, নাট্যতত্ত্বশিক্ষা, পর্যবেক্ষণ, সমকালীন ও কালক্রমিক বিশ্বপাঠ আর নবসৃজনস্পৃহার মিলিত সুবাদে নাটকটিতে আঙ্গিকগত পরীক্ষণ হয়েছে বেশ। নির্দেশক বা প্রযোজনাপক্ষ অবশ্য সেটাকে অবিমিশ্র বা শুদ্ধ সংযাত্রা হিসেবে দাবিও করেননি। সমকালীন স্থানীয় প্রেক্ষাপটের, মজার, আগ্রহের আর অসঙ্গত বিষয়-আশয় নিয়ে রূপক-ব্যঙ্গভঙ্গিতে মূলত ফরম্যাটেড স্ক্রিপ্ট ছাড়াই তাত্ক্ষণিক উদ্ভাবন এবং শিল্পীদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ায় যেমন সং-য়ের অভিনীতব্য বিষয় রচিত হয়ে এসেছে, তেমনি এই নাটকেও এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের ইতিহাস এবং সামগ্রিক কুচর্চায় বেহাল বর্তমান-সহ চারপাশের ব্যক্তিক, রাষ্ট্রিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে ইম্প্রোভাইজেশন করতে করতেই তৈরি হয়েছে মূল পারফরম্যান্সের বিষয়-বুনন। আর, সংযাত্রা’র মতো ক’রেই এতে বিদ্রূপাত্নক ও হাস্যকৌতুকমূলক (সমসাময়িক গানের প্যারোডি-সহ) গানের প্রয়োগ হয়েছে। অভিনেতাদের বিশেষ স্টাইলাইজড মুখাবয়ব তৈরি এবং সামগ্রিক রূপ ও অঙ্গসজ্জার ক্ষেত্রে আমাদের দেশজ সংযাত্রার ঐতিহ্যের সাথে মেলানো হয়েছে চিনা মুখসজ্জার ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতাকেও। আবার অভিনয়রীতিতেও পরীক্ষণমূলকভাবে সংযাত্রার মূলসুরের সাথে যুক্ত হয়েছে পাশ্চাত্যের (ইতালি) কমেডিয়া-দেল-আর্তে’র বিশিষ্ট অভিনয়ভঙ্গি। আশপাশের চেনার পাশাপাশি এতটা খেয়াল-না-ক’রে-ওঠা উদ্ভট এবং অনুচিত নানা চর্চা-অচর্চা-কুচর্চাই স্থান পেয়েছে উত্কৃষ্ট নাট্যশৈলীপুষ্ট এই মনোজ্ঞ অভিনয় আয়োজনে। ভরপুর হাস্যবিনোদনে দম ফেটেছে হল-ভর্তি সবগুলো মানুষের। শুধু হাসিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, সাথে সাথে বারেবারেই গভীরভাবে ভাবিয়েছে এবং বিস্ময়ে তাক লাগিয়েছে এই পারফরম্যান্স।

সাত-সন্ধ্যায় হয়ে যাওয়া এ নাটকটি উত্সর্গ করা হয় গীতল প্যাচালে তীক্ষ্ন স্যাটায়ারের জন্য বিখ্যাত, অমিত তেজস্বী, প্রয়াত নাট্যজন এস এম সোলায়মানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদের সাথে সে-কাজে সহযোগিতা করেছেন নাট্যকলা বিভাগের তরুণ শিক্ষক সুদীপ চক্রবর্তী, যিনি নিজেও বিভাগে ‘থ্রি সিস্টারস’ (আন্তন চেখভ’র)-এর মতো বেশকিছু অনবদ্য মঞ্চায়ন উপহার দিয়েছেন। বিপাশা রায়, তামান্না রহমান, লুবনা মরিয়মের নৃত্য প্রশিক্ষণ এবং রহমত আলী’র (বিভাগেরই আরেক শিক্ষক) সংগীত প্রশিক্ষণের সাথে সাথে আলাদা ক’রে ইম্প্রোভাইজেশন ও অভিনয় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিভাগেরই অন্য অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল শাহীন। সে-প্রশিক্ষণের প্রয়োগ-প্রদর্শনের জন্য সেই প্রক্রিয়ায় মডেল হয়ে সহযোগিতা করেছেন হুমায়ুন ফরিদী, চঞ্চল চৌধুরী, সাজু খাদেম, শামীম জামানের মতো প্রতিষ্ঠিত পরিচিত অভিনয়শিল্পীরা। সবচেয়ে বিরল আর বড় ব্যাপার হ’লো- এই প্রযোজনার জন্য শিক্ষার্থীদের সংযাত্রা অভিনয় দেখা ছাড়াও তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ হিসেবেই নিতে হয়েছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী সং দল-এর সরাসরি প্রশিক্ষণ। উক্ত দলের নৃপেণ চন্দ্র পাল, সিদ্ধিচরণ পাল, ভজন পাল, হরিদাস পাল এবং বাবলু চন্দ্র সাহা-কে এই কাজের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেয়া হয়েছে শিক্ষকের সমান মর্যাদায়, এই মর্মে, যে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে তাঁরা পাঠদান করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক নাট্যশিক্ষা ও চর্চার এই ধারায় আমাদের আশেপাশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঋদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে যখন এমন সুন্দর ও সুঠাম হয়ে এসে যোগ দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও নাট্যকলা বিভাগ, সেটা আমাদের মতো চির-নাট্যক্ষুধার্ত চোখগুলোর জন্য অনেক বেশি পাওয়ার, আনন্দের এবং একই সাথে শিল্প-বিমোক্ষণের (ক্যাথারসিস)। এ জাতীয় প্রযোজনাগুলোর ধারাবাহিক উন্নত মান নাগরিক এবং জাতীয় নাট্যচর্চায় নিঃসন্দেহে একটি গৌরবজনক বড় সংযোজন। বাংলাদেশের নাট্যজগতে যশস্বী শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন নিয়মিত নৈকট্যে নাট্যশিক্ষার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের দর্শক-বোদ্ধাদেরও মত, ভাব আর প্রশংসা-প্রতিক্রিয়া নিয়ে এ নাট্যপীঠ এবং এমন নাট্যচর্চা তার আরো সুফলা সম্ভাবনা আর ঋদ্ধির পথে এগিয়ে যাক দৃপ্তপদে, ছন্দে-শব্দে, আনন্দে।

(আদি পোস্টাইম @সচলায়তন: ২০০৯-০৮-২৩ ১৫:৪৮)

কোন মন্তব্য নেই: