ধুলো ঝেড়ে, সোঁদা ঘাসে পেতেছি মাদুর ...

সৌজন্যের অভ্যাস আর শান্তিতে বিশ্বাস থাকলে যেকোনো মহল্লার যেকোনো প্রাপ্তমনস্ক ছেলে বা মেয়েই এই মাঠে খেলতে পারবে। খেলার ডাক না দিতে পারলেও অংশগ্রহণের জন্য আসতে কারো জন্য কোনো বাধা-নিষেধ বা রেষারেষি নেই। হোক খেলা, তবু সব খেলারও তো কিছু নিয়মনীতি আছে, তাই না? স্বাধীনতার একটা যমজ ভাই আছে, নাম দায়িত্ব। সেমতে, নীতির ওপর আস্থা রাখা গেলে নিয়মের ভার নিশ্চয়ই বেশি একটা কঠিন হবে না। আর, প্রয়োজনে কখনো বল/ব্যাট/গার্ডার/গ্লভস জাতীয় জিনিসপত্তর খেলোয়াড়ের নিজের ঘর বা গাঁট থেকে নিয়ে আসতে হ'তে পারে। তবে, সুঁই-আলপিন-ছুরি-চাকু-ইট-পাথর-ডাণ্ডা বহন ভীষণভাবে নিষিদ্ধ!

শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১১

[পূর্বপ্রকাশিত] জীবন: প্রবাহ-প্যাঁচ-পয়জার



একেকটা দিন আসে অনেক প্রবল প্রখর আওয়াজ দিয়ে-- শয্যাপাশের জান্লা দিয়ে আততায়ী আলো ছুঁড়ে, সেলফোনের তীক্ষ্ণ নাছোড় জাগরঘণ্টা বাজিয়ে। কিন্তু জীবন থেকে আরো চব্বিশ ঘণ্টাটি কিংবা ক্যালেন্ডার থেকে আরেক তারিখটা মুছে যাওয়ার সময়, রাতটা একটু কিছু ব'লে পর্যন্ত যায় না। চিত-কাতের মধ্যেই জানি না কখন অচেতন হই দরকারি আপদের অভ্যস্ত ভরসায়-- দিন এসে ঠিকই আবার টেনে-হিঁচড়ে উঠিয়ে নেবে কাজের পথে। "বয়স বাড়ে, আমি বাড়ি না"র পুরোনো ফাঁপরেই হাতড়ে চলা, চালিত হওয়া না-দেখা ইশারায় কিংবা প্রকৃতির মনোহীন অমোঘ অনির্দিষ্টতায়।


২.
মাস-মজুরির আরো একটা দিনশেষে হঠাতের ফুরসতে পালাকার'র স্টুডিও থিয়েটারে ঢুকি গিয়ে, শামিল হই ফ্রান্জ জেভিয়ার ক্রোয়েত্জ-এর 'রিকোয়েস্ট কনসার্ট'-এ। সৃষ্টিশীলতার দক্ষ নির্মাণে দেখি জীবনের অবাক নির্বাক সূক্ষ্ম প্রতিরূপ। নিজঘরে মাঝবয়সী একলা নারীর জীবনের শেষ রাত -- সন্ধ্যায় কাজশেষে ঘরে ফেরা থেকে শুরু ক'রে আত্মমগ্ন এটাওটায় চ'ড়ে গভীর রাতে আত্মঘাত -- "ছুটি, এ অনন্ত ছোটাছুটি হ'তে, ব্যর্থ শূন্যপানে!"

৩.
নাট্যসন্ধ্যায় সঙ্গী হয়েছিলো নাট্যকারুর পুরোনো চারুসঙ্গী, যার সঙ্গে যৌবনের এই পরসন্ধ্যায় আচানক চলে কিছু ভাবালুতা, বিমূর্ত ছুঁয়ে যাওয়া কেবল মনের আনাচকানাচ। একলা দু'টো আকুল মনে পাশাপাশি ভাবাভাবি চললো বুঝি-- কে আমরা কীভাবে করবো শেষে জীবন কিংবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন!

৪.
নাটক থেকে, নাটুকে সেই সন্ধ্যা থেকে ফিরে এসে একলাবাসের একঘরে সেই চিলেকোঠায় ঢুকতে গিয়ে উদাস ছাদের আঁধার-আঙিনা থেকে প্রতিরাতের মতোই চোখ চ'লে যায় বাড়ি-বাড়ি জান্লা-সারির আলোগুলোয়, আশা আর ভালোবাসার দিব্যি বসতি যেখানে দোদুল দোলে চেনাসুরের জোয়ারভাটায়।

৫.
অনীহার ক্লান্ত পায়ে ঘরে ঢুকে মিলিয়ে দেখি শেষ নির্বাসনের স্বেচ্ছাঠিকানার একোণ-ওকোণ ঠিকবেঠিক। নামেমাত্র আসবাব আলুথালু নোংরা হচ্ছে দিনকেদিন। বেহাল বেচাল ঘোরের ফেরে আলিঝালি প্রাণভোমরা নিয়ে কী নিস্পৃহ চলছে বসবাস!--

মোষ তাড়ানোর দিন--
বিবর্ণ মলিন।
টানাপোড়েনের রাত--
কিবলই চিত-কাত।
চাকায় রাত্রিদিন,
চাকাতে দিনরাত--
চক্রবৃদ্ধি ঋণ,
নিয়মের উত্পাত।


বাড়াবাড়ি পুনশ্চঃ
ওখানেই শেষ হ'তে পারতো। কিন্তু, ঘরের ছবি মুঠোয় ক'রে পরদিন কাজে ঢুকতে যখন দেখি-- গত দুপুরের হঠাত্ দুর্ঘটনায় জ্ব'লে গিয়ে খুলে পড়া বিদ্যুতের তার আজও অমন পেঁচিয়ে আছে নির্ণয়ের অতীত, মনে ভাবি-- এই প্যাঁচও একসময় ছুটবে নিশ্চয়, দুরন্ত ছুটে যাবে অন্য কোনো প্যাঁচের দিকে।


পোস্টের সর্বোপরে যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে, সেটি নিম্নোক্ত ওই প্রকাশনার জন্য
অরূপ কিংবা নজমুল আলবাব কারো এডিট করা রূপ। আর এখানে যেটি দেখছেন--
এটিই ছিলো আমার দাখিল করা মূল ফ্রেম-- ২ মেগাপিক্সেলের সেলফোন-ক্যামেরায় তোলা।
















[১১.০৩.২০০৯
মহাখালী, ঢাকা।]
[মার্চ ২০০৯-এ সচলায়তন ফোটোব্লগ ই-সংকলন 'প্রতিদিনের গল্প'তে পূর্বপ্রকাশিত।]

২টি মন্তব্য:

নুশেরা তাজরীন বলেছেন...

নাগরিক কবির গদ্য, সে অতি চমৎকার!!

সাইফুল আকবর খান বলেছেন...

অনেক অনেক অতি অতি ধন্যবাদ, আপু। :-)