ধুলো ঝেড়ে, সোঁদা ঘাসে পেতেছি মাদুর ...

সৌজন্যের অভ্যাস আর শান্তিতে বিশ্বাস থাকলে যেকোনো মহল্লার যেকোনো প্রাপ্তমনস্ক ছেলে বা মেয়েই এই মাঠে খেলতে পারবে। খেলার ডাক না দিতে পারলেও অংশগ্রহণের জন্য আসতে কারো জন্য কোনো বাধা-নিষেধ বা রেষারেষি নেই। হোক খেলা, তবু সব খেলারও তো কিছু নিয়মনীতি আছে, তাই না? স্বাধীনতার একটা যমজ ভাই আছে, নাম দায়িত্ব। সেমতে, নীতির ওপর আস্থা রাখা গেলে নিয়মের ভার নিশ্চয়ই বেশি একটা কঠিন হবে না। আর, প্রয়োজনে কখনো বল/ব্যাট/গার্ডার/গ্লভস জাতীয় জিনিসপত্তর খেলোয়াড়ের নিজের ঘর বা গাঁট থেকে নিয়ে আসতে হ'তে পারে। তবে, সুঁই-আলপিন-ছুরি-চাকু-ইট-পাথর-ডাণ্ডা বহন ভীষণভাবে নিষিদ্ধ!

মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০১০

[হিজরতপূর্ব] চর্চাপদ ০১

[ডিসক্লেইমার: পুরোপুরি ব্যক্তিবদ্ধ না হলেও, এ শিরোনামের অধীনে যা আসবে টাসবে, তা আমার ব্যক্তিকেন্দ্রিক বটে! সবাই মজা পাবেন পড়ে- এমন দুরাশা করিওনে। আবার, তাই বলে সবাই গালমন্দ করবেন- অতোটা দুর্দশাও নিই না আশঙ্কায়। খুব নিয়মিত এ উত্পাতের ফুরসত বা দুর্মতি কোনোটাই আমার হবে না বলেই আশা। মাঝেমধ্যে সহব্লগারের প্যাচালি একটু সহ্য করে নেবেন জানি।]

F1 না চেপে, বরং আমার F5-ই ভালো!

অফিসে প্রায় সারাটা দিন চলে গ্যালো কোনো কাজ ছাড়া, মানে বলতে গেলে
ওরকমভাবে অফিসের কাজ ছাড়া। আমাদের 'ক্রিয়েটিভ' বাহিনীর একটু সলিচ্যুড দরকার ছিল। খদ্দের, খদ্দের নির্বাহী আর হিসাব নির্বাহীদের নানাবিধ 'ক্যারিক্যাচাল' গ্যাঞ্জামের মধ্যে আমাদের কাজ ভালো হচ্ছে না। আমি যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের ডেস্কটাকে তার অবস্থানের নাড়িসমেত সংসারী স্বামীর মতোই ভালোবাসছিলাম, তবু বৃহত্তর বাহিনীর - বিশেষত বসের - ইচ্ছায়ই আসনব্যবস্থার পুরো রদবদল হয়েই গ্যালো অফিসে। এইচআরের সবেধন নীলমণি এক আপা ছাড়া আর কেউই আগের ঠিকানায় নেই। যদিও গতকালই জানতাম যে তারও আগের দিন আমাদের গণকযন্ত্রদেরকে টেনেহিঁচড়ে নতুন নতুন অব(/প)স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তবু আজ সকালে যে অফিসে ঢুকে জায়গাটাকে এত বেশি অচেনা আর নিজে(দের)কে এত বেশি উন্মূল উদ্বাস্তু খুদিকুচিপানার মতো লাগবে- এমন করে পুরোটা বুঝতে পারিনি। বড় যন্ত্রগুলো তো নতুন ঘরে ঘরে স্থিত হলোই, তো আমাদের মালসামানা (ভাগ্যিস আইটি অপারেটর আর মেসেঞ্জাররা ওগুলোকেও তাদের মতো করে নতুন নতুন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গোছায়নি!) আগের টেবিল-ড্রয়ার-বোর্ড ইত্যাদি থেকে নতুন ঠিকানায় নিয়ে আসার কাজটা সকালে প্রায় একসাথে সবাই করছিল পোনার ঝাঁক বা তীর্থযাত্রীদের মতো, সবাই সমান ব্যস্ততায় আর গুরুগম্ভীর অস্বস্তিতে। এমনকি কাউকে কাউকে এই ওলট-পালট পালট-ওলট নিয়ে বেশ চাপা চাপা খুশিও দেখা গ্যালো! আমার ভুরু-কপাল-মন সব কুচকে রেখেই আমি পার করেছি দুপুরেরও পরে পর্যন্ত চলা আমার মুভেবলস প্রতিস্থাপন-পুনঃস্থাপনের গুরুভার কাজটি। বারবার এমাথা ওমাথা করে জিনিসপত্র নেয়াথোয়ার কষ্টের চেয়েও মাথায় মনে ব্যথা বেশি, মেজাজ বরং খিঁচড়েই আছে এ কারণে যে আগামীকালকেই আমার আবার বাসাও বদলাতে হচ্ছে।

এমনিতেই এই সময়টার কাছাকাছিই কাকতালীয়ভাবে কনফু'র “বাসা ভেঙে বাক্স বানাই”এর সাথে দেখা হওয়ায় সেদিন থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল পুনরাসন্ন বিপদের এই সুন্দর হৃদয়বিদারী বর্ণনাটা। এমন বিপদের আগমনী যতোই জোরেশোরে শুনি, জীবনেও আগেভাগে প্রস্তুত আমি থাকতে পারি না। বাঁধাছাদা প্যাকপুক করা জাতীয় কাজ এগিয়ে রাখা আমি পারি না, বরং তাতে আমার কাজ আরো কেঁচে যায় বেশি! স্বাধীনচেতাচেতি করে পরিবারের বাইরে এসে বাসা ভাঙার গড়ার আবার ভাঙার আবার গড়ার ফাঁপর গত তিন বছরের একলাবাসে অনেকবার হাড়ে হাড়ে হজম করে আসছি। এবার সেই ফাঁপর আরো অনেক বেশি এ কারণেই, যে আবার আমি উঠছি গিয়ে আধাখ্যাঁচড়া এক টুকরো পরিবারের সঙ্গে। কতোদিনে যে পুরো সিস্টেম রিকভারি-টা হওয়াতে পারবো এবার- ভাবতেই সাহস পাচ্ছি না! একলা সময় তো আর কেউ যেমন ছিল না সাথে, কোনো দায়িত্বের ঝামেলাও তেমন ছিল না কাঁধে, কেরামান-কাতেবীনকেও দিনের মধ্যে চৌদ্দবার গুলিবিদ্ধ করে ঝাড়াহাতপা ঘুরে বেড়িয়েছি, ঘরের মতো ঘর ময়লা হয়েছে (বহুকাল পরে পরে বাড়িয়ালা ছাড়া এই সমস্যা দেখারও কেউ ছিল না), রান্না করার ইচ্ছে হয়ে উঠলে রেঁধেছি, না হলে অনেক সময় খাই-ইনি। একলা-পেট সুখী পেট নিঃসন্দেহে! এখন বুড়ো-অথচ-চিন্তাসমর্থ বাবা আর ছোট বোনকে নিয়ে সেই নতুন বাসায় ন্যূনতম একটা নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। ভয় হচ্ছে রীতিমতো!- কেন না আবার 'গোছালো' হতে হবে আমার মতো ভয়াবহ এলোমেলো, অলস, শীতনিদ্রাকাতর কুনোব্যাঙটাকে!

বছর কয় আগে প্যাঁচালো একটা পাস-অ্যাওয়ে মেসেজ পেয়েছিলাম মোবাইলে-

অফিসে কীভাবে একটা ভালো দিন শুরু করা যাবে? প্রথমেই ডেস্কের পিসি-টা অন করে তার ডেস্কটপে একটা নিউ ফোল্ডার ওপেন করো, তার নাম দাও 'বস', তারপর সেটার ওপর রাইট ক্লিক করে ডিলিট অপশন ক্লিক করো, তোমাকে জিজ্ঞেস করা হবে- 'তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি 'বস'কে রিসাইকেল বিন-এ পাঠাতে চাও? তুমি সেটার উত্তর দিতে 'ইয়েস'এ ক্লিক করো। তারপর তুমিও রিসাইকেল বিন-এ যাও, সেখানে 'বস'-এর ওপর আবার 'ডিলিট' চাপো, তোমাকে আবার জিজ্ঞেস করা হবে- 'তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি 'বস'কে চিরতরে ডিলিট করতে চাও?', তুমি উত্তর দাও 'ইয়েস', বস বিলীন হয়ে যাবে, দেখবে দিনের শুরু কী সুন্দর হয় আর জীবন কতো শান্তিময়!

বস-এর ওপর এমন অন্যায্য অনাচার আমার কখনই চালাতে হয়নি, কারণ আমার বস কখনই তেমন আপদ হয়ে ধরা দেননি আমার কাছে। তবে, বাহ্যিক কিছু জিনিস নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে বা রিফ্রেশ করে অনেকবারই আমি সব কাজ ঠিকমতো করে ফেলার ঝাড়াপর্ব শুরু করেছি অনেক জোশ নিয়ে। সবসময় সফল হইনি, তবে অনেক সময়ই আমার বড় কোনো কাজ হতে হলে আমার কোনো না কোনো পর্যায়ে এমন একটা রি-শাফল দরকার হয়েছে। বড় বড় পরীক্ষার আগে আমি পড়ার চেয়েও অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বেশি সময় দিয়েছি রুটিন করতে আর বারবার বদলাতে। আর কতোদিন বাকি এবং ঠিক এখন আর কতো পড়া বাকি- সেই হিসেব করে বারবার আমি পড়ার প্রয়োজনীয় দৈনিক সময়, আর কোন বিষয়ে কতোটুকু জোর আর সময় ভাগ করতে পারবো- সেগুলো হিসেবই করেছি বেশি। ছাত্রজীবন থেকেই ঘর কিংবা টেবিল না গুছাতে গুছাতে বহু সময় পার হয়েছে বটে, কিন্তু যখনই যতোবারই নিজেকে মৃতপ্রায় অকর্মণ্য স্বীয়-অপব্যয়ী মনে হয়েছে, ততোবারই আর কোনো জাদুকবচ বা চিন্তা আমার কাজে আসুক না আসুক, সবচেয়ে বেশি সাফল্য যেটা থেকে পেয়েছি আমি, তা হচ্ছে পবিত্র মন নিয়ে একদিন কোনোমতে নিজের টেবিল এবং নিজের ঘরটা গুছিয়ে ফেলা। তখন গোটা পৃথিবীটাই আরো একবার সুষ্ঠু সুন্দর নির্ঝঞ্ঝাট সম্ভাবনাময় মনে হয় বলে আবার আমি নবজাতকের উদ্যমে নতুন করে কাজের সঞ্জীবনী পাই। একলাবাসের এই সময়টুকুতে একাধিকবার আমি ইচ্ছে করেই তোড়জোড় করে নতুন বছর শুরু করেছি নতুন বাসায়, এবং তারও আগে এই নতুন অফিসও শুরু করেছিলাম এক বছরের পয়লা দিনই, শ্রেফ সবকিছু নতুন করে ভালো করে শুরু করার জন্য এবং করে ফেলার সেরে ফেলার জন্য।

তো, এই একটা ভালো ফল আমি বের করে নিচ্ছি আবারও, এই বাধ্যতামূলক বদলেরও। আজ কোনোমতে বহুদিনের না-গোছানো কাজের টেবিল তো গোছানো হয়েই গ্যালো। এখন আমি যেটা করবো, তা হচ্ছে- পিসি-টাকেও একটু নতুন চেহারা দেবো। নানা পর্যায়ের খসড়া টসড়া আর ডুপ্লি ফাইল-টাইল, কপি-পাল্টাকপি, ফিডব্যাক-মাইলস-ফাইলস যতো আছে- সেগুলোকেও আবার ধরে ধরে সাইজ করবো, পরিপাটি করবো, অদরকারী সবকিছু হাপিশ করে দিয়ে পিসি'র মাথায় অনেকটা জায়গাও খালি করে ফেলবো, এমনকি ডেস্কটপের ছবি-রঙ-গেটাপও নতুন করে দেবো। ফেসবুকের স্ট্যাটাস পরিবর্তন আরো আগেই হয়ে গ্যাছে। এখন আগামীকাল বাসাও যেহেতু বাধ্যতামূলকভাবে পাল্টাতে হচ্ছেই, যে-ক'দিনই সময় লাগে লাগুক, সেটাও সুন্দর করে নিপাট ভদ্রস্থ পরিমার্জিত সুন্দর সম্ভাবনাময় আশার আবাদী করে ফেলবো। সত্যিই, বহু বড় বড় কাজ সামনে। না, সেগুলোর ফিরিস্তি দিয়ে আপনার মাথাধরা আর চাপাচ্ছি না। নিজে নিজেই জাগি তাড়াতাড়ি, নিজেই ঝাঁকি দিই নিজেকে। নিজেকেই বলি-

আবার শুরু হও সাইফুল, আরো একবার! এফ-ফাইভ চেপে হোক, চা-কফি খেয়ে হোক, ঘর গুছিয়ে হোক, নিজেকে কিছুটা পাল্টে হলেও হোক, নতুন করে আবার একটু তাজা হও, কেজো হও।

(আদি পোস্টাইম @সচলায়তন: ২০০৯-০৫-৩১ ১৯:১৭)

কোন মন্তব্য নেই: