ধুলো ঝেড়ে, সোঁদা ঘাসে পেতেছি মাদুর ...

সৌজন্যের অভ্যাস আর শান্তিতে বিশ্বাস থাকলে যেকোনো মহল্লার যেকোনো প্রাপ্তমনস্ক ছেলে বা মেয়েই এই মাঠে খেলতে পারবে। খেলার ডাক না দিতে পারলেও অংশগ্রহণের জন্য আসতে কারো জন্য কোনো বাধা-নিষেধ বা রেষারেষি নেই। হোক খেলা, তবু সব খেলারও তো কিছু নিয়মনীতি আছে, তাই না? স্বাধীনতার একটা যমজ ভাই আছে, নাম দায়িত্ব। সেমতে, নীতির ওপর আস্থা রাখা গেলে নিয়মের ভার নিশ্চয়ই বেশি একটা কঠিন হবে না। আর, প্রয়োজনে কখনো বল/ব্যাট/গার্ডার/গ্লভস জাতীয় জিনিসপত্তর খেলোয়াড়ের নিজের ঘর বা গাঁট থেকে নিয়ে আসতে হ'তে পারে। তবে, সুঁই-আলপিন-ছুরি-চাকু-ইট-পাথর-ডাণ্ডা বহন ভীষণভাবে নিষিদ্ধ!

মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০১০

[হিজরতপূর্ব] চর্চাপদ ০৩

“বন্ধু আমার মন ভালো নেই, তোমার কি মন ভালো?”
বন্ধু আমি অধম, তবুও তুমি থেকো ভালো আলো!

ঘুমে নেমেছিলাম বেশ দেরিতেই, ছুটির পূর্বরাতের আশ্কারায়। তাই সেখান থেকে উঠবার জন্যও নিজের শরীরকে অনেক লম্বা সময়ই বরাদ্দ করেছিলাম নিজেরই মনের সহৃদয়তায়। সকালোদ্দিষ্ট বকেয়া রুটি-মামলেট দিয়েই ভরদুপুরে মুখ বুজে সারলাম লাঞ্চলেট! পরদুপুরের কুক্ষণে হঠাত্ ভেবে ফেলেছিলাম বন্ধুক’জনের একটু খবর নিই, যাদের মুখ আর নামগুলো
আজকাল না-পারতে একটু একটু ক’রে চাপা পড়তে থাকে সপ্তাহের কাজের কবরে।

প্রথমটাতেই পরোক্ষ ভাব-ভাষায় শুনতে হ’লো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আর নিয়মিত অন্যায্য অনুযোগ- আমি আজকাল খবর নিই না, আর তাই বিষয়গুলো একটু বদলে বদলে যাচ্ছে, রয়ে সয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে, আর তার মানেই আমি যেন তবু নির্বিকার নির্ঝঞ্ঝাট বয়ে যাচ্ছি আমার স্বার্থপর সুখ-সায়রে! একটু খুঁচিয়ে বুঝাতে বা বুঝতে গেলাম- এরকম কেন মনে হচ্ছে, তো সেটাও যথারীতি হয়ে গ্যালো বাগে পেয়ে “কথা শোনানো”! আমি যতোই গর্দভ ছাত্রীকে অ্যালজাবরা বুঝানোর মতো ক’রেই নিষ্ঠ আর ঠাণ্ডা মাথায় লাল কলমে শ্রেফ নিচে-দাগিয়ে যাই এ ব্যাপারটিই, যে আজ আমি যে এটুকু জানতে পারলাম তা-ও কিন্তু আমিই ফোন ক’রে তবেই জানলাম, আমার মূল্যবান সংবেদনশীল বন্ধুটি কিন্তু আমার শেষ ফোনের পরের এই লম্বা অবকাশেও নিজে আর ফোন করেইনি- ততোই সে প্যাঁচ খায় তিন-চার লাইন উপরের একই জায়গায়- “আসোলে তোমাকে আমি এটা বলতে চাইনি, কিন্তু কীভাবে যেন বলে ফেললাম একটু হালকা করার চিন্তায়! হ্যাঁ, না বললেই ভালো হতো”। ঘুরে ঘুরে তিনবার আমি অংকের দ্বিতীয় লাইনে গিয়ে চলকের মান ঠিক ক’রে বসাতে বলি এই ভাষায়, যে- বলা-না-বলা-টা এত বড় সমস্যা না, বরং বিষয়টা যে ঘটলো সেটাই যথেষ্ট দুর্যোগ, অতএব এর মুখোমুখি দাঁড়াতেই হতো। তার প্যাঁচ ছুটলো না, বা সে ছুটলো না সেই মোবিল-হীন ক্যাঁচকেঁচে প্যাঁচ থেকে, তাই মোবাইলের দূরালাপনেই তার জুটলো বিকট একটা ধমক! অতো জোরে আমি বহুদিন কাউকে কিছু বলিনি! কতোক্ষণ নিশ্চুপ থাকলো, কিংবা নিঃশব্দেই কাঁদলো স্বীকারোক্তিহীন। আমি গলা নামিয়ে আবার নিজেই নিষ্ঠ ছাত্র হ’তে যাই সময় সে জানালো আমার সাথে কথা বলবে না ওই সময় ওইভাবে। শক্তির সাথে সাথে কথা বলার রুচিরও বুঝি অভাব ঘটেছিল তার!

অপারগতার গায়ে অপরাধের গাঢ় দাগ নিয়ে নিজের দিকে ফিরতে ফিরতেই ফোনে এলো স্কুলের একটা নীরব দীর্ঘায়ু বন্ধু, যে জানালো- আমাদের স্কুলের আরেকটা বন্ধু ময়মনসিংহে রাজনৈতিক অ্যান্টিপার্টির উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের শিকার হয়ে ডিএমসি হাসপাতালে আশঙ্কার মধ্যে চিকিত্সাধীন। জিজ্ঞেস করলো- আমি যাবো কি না। এত বড় মাঝখানের সময়টাতে এই আহত বন্ধুটির সঙ্গে আমার যোগাযোগও তেমন পোক্ত কিছু ছিল না, আর তার মধ্যে আবার নিজেকেই শরীর ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে যতোটা আশঙ্কার মধ্যে আবিস্কার করছি আজকাল, অতোটা বন্ধুদরদী সংবেদী হয়ে উঠতে পারি না সত্যিই, অন্যায্য অন্যায় ক্যাজ্যুয়ালটি’র স্বাভাবিক আঘাতে দূরবর্তীভাবেই নেহাতই একটুখানি আহত হয়েও শুধু বলি- “তুমি যাও, আমি পরে তোমার কাছ থেকে জেনে নেবো কী অবস্থা”।

হ্যাট্রিক বারে আমি ফোন করলাম আরেক অমূল্য অনন্য বন্ধুকে, যাকে আমি ধমক জীবনেও দিতে পারি না পারবোও না, যার “হোয়াট’স রং উইথ ইউ!” মার্কা আরেক ঝাড়া ঝাড়ি বরং আমিই নিরুত্তর হজম করেছি তিনরাত আগেও একবার! সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর খবর শুনেছি কি না। আমি বললাম- “না, এই শুনলাম!” সে জানে আমার অবস্থা এরকমই থাকে, তবু রেটোরিক্যাল প্রশ্ন করলোই এবার- “পৃথিবী থেকে এত দূরে আছেন আপনি?!” জবাব দিই না নির্দিষ্ট ক’রে। সন্দিগ্ধ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে এত বড় তারকার আচানক মৃত্যুর আঁচ আমাকে অ্যারেস্ট করলো না মোটে, সত্যিই।

ফেসবুকে যখন ঢুকলাম ছুটির আলস্য-অবসাদের বাকিটুকু গলিয়ে মিলিয়ে নিতে, সেখানেও “রেস্ট ইন পিস মাইকেল জ্যাকসন। উই লাভ ইউ, উই'ল মিস ইউ...” দেখি প্রায় সবার স্ট্যাটাস-এ স্ট্যাটাস-এ, পোস্টে পোস্টেও। সবাই আসোলেই অনেক বড়, অনেক সামাজিক, অনেক এমপ্যাথেটিক, অনেকই বৈশ্বিক!

অতো অতো দাগে অতোটাই দাগী হয়ে আছি আজকাল, যে মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু কিংবা স্কুলবন্ধুর আশঙ্কাজনক হাসপাতালবাস- এসব কিছুই তেমন আর দাগ ফেলতে পারে না আমার মগজে বা মনে।

কুঁড়ে মূর্খ নিজবদ্ধ ছোটলোক আমি এদিকে ফেসবুক বন্ধ করি নিজের স্ট্যাটাসে গাঢ় এক পুরোনো অভিমান লিখে, কিংবা নিজের বিরুদ্ধেই অকাজের এ গুঢ়তর অভিযোগ-

“এভরি রং ইজ উইথ মি!”

[২৬ জুন ২০০৯, উত্তরা]
(আদি পোস্টাইম @সচলায়তন: ২৭.০৬.২০০৯ ১৩:১৯)

কোন মন্তব্য নেই: