ধুলো ঝেড়ে, সোঁদা ঘাসে পেতেছি মাদুর ...

সৌজন্যের অভ্যাস আর শান্তিতে বিশ্বাস থাকলে যেকোনো মহল্লার যেকোনো প্রাপ্তমনস্ক ছেলে বা মেয়েই এই মাঠে খেলতে পারবে। খেলার ডাক না দিতে পারলেও অংশগ্রহণের জন্য আসতে কারো জন্য কোনো বাধা-নিষেধ বা রেষারেষি নেই। হোক খেলা, তবু সব খেলারও তো কিছু নিয়মনীতি আছে, তাই না? স্বাধীনতার একটা যমজ ভাই আছে, নাম দায়িত্ব। সেমতে, নীতির ওপর আস্থা রাখা গেলে নিয়মের ভার নিশ্চয়ই বেশি একটা কঠিন হবে না। আর, প্রয়োজনে কখনো বল/ব্যাট/গার্ডার/গ্লভস জাতীয় জিনিসপত্তর খেলোয়াড়ের নিজের ঘর বা গাঁট থেকে নিয়ে আসতে হ'তে পারে। তবে, সুঁই-আলপিন-ছুরি-চাকু-ইট-পাথর-ডাণ্ডা বহন ভীষণভাবে নিষিদ্ধ!

মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০১০

[হিজরতপূর্ব] ঘুম ঘুম ঘ্ঘ্ঘ্ঘ্ঘ্ঘ্ঘ্ (অনিদ্রায় ঝুলে থাকা দ্বিতীয় প্রহর)

(প্রথম প্রহর ঘুমিয়েছিলাম এখানে)

জ.

জেগেও তো উঠি আবার ঘুমানোর জন্যই। পৃথিবীর আহ্নিক গতির সাথে সম্পর্কিত এবং সদৃশ যা-ই বলি, রাতদিনের মতোই ঘুম-জাগরণেরও এই যে চির আবর্তন, সেটা ব্যক্তির দৈহিকতা জৈবকিতা ছাপিয়েও যেন যথেষ্টই নৈর্বক্তিক প্রাকৃতিক। আর, স্বপ্ন নামে আরেকটা যে আশ্চর্য জন্মায় ঘুমেরই ঔরসে, সেটার দিকে গিয়ে না হয় এই ছোট্ট কলেবরের মধ্যে নতুন কোনো ঘোট না পাকাই আজকে! ঘুমে-ওমে পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে আরো কিছুদিন, আরেকটা স্বপননামা
নামিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা না হয় অন্য কোনোদিন দেখা যাবে চেষ্টাচরিত্র ক’রে।

ঝ.

ঝুম বৃষ্টির মতো ঝুপ ক’রেই কতো টুকরো টুকরো ঘুম চ’লে আসে আমাদের কারো কারো! দিনের যেকোনো সময়ে, যেকোনো স্থানে অবস্থায় অবস্থানে। মনে পড়ছে, খুব ছোট্টবেলার পদব্রজাশ্রিত ছোট ছোট দূরত্বের ছোটযাত্রার দিনগুলোতে হঠাত্ কখনও দশ-বারো মিনিটের জন্যও যদি রিকশায় ওঠা হ’তো, যেমন ক্লাস টু-থ্রি’র দৌড়-ফ্রি জীবনে সপ্তাহে এক-দুইবার যখন স্কুল থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ দূরে বয়সে-বেশ-বড় এক চাচাতো ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হ’তো বিকেল-সন্ধ্যায় - পিঠেপিঠি বড়ভাইটা বসতো আম্মার পাশে আর আমি আম্মার কোলে - তখন সেই পনেরো মিনিটেই প্রায় প্রতিদিন আমি কোলের মধ্যে কাঁই হয়ে যেতাম সেই ছোটমানুষি ঘুমে। আরো একটু বড় হয়ে যখন নামজঘরে যেতাম জুম্মা’র ডাকে, গ্রীস্মের অনেক দুপুরেই গোসলের পরপর বৈদ্যুতিক পাখার নরম দরদ ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছুলেই আমার ঘুম চ’লে আসতো ভারহীন আরামে। হঠাত্ মধ্যে মধ্যে খুতবা’র আওয়াজ আর জোশ একটু বেড়ে গেলে তবে চমকে জেগে উঠে খুব ভাবতাম আন্তরিক সংশয়ে- এইটুকু অনিচ্ছা-ঘুমেও আবার ওজু ভেঙে যায় না কি! আর এখন তো দৌড় দৌড় দৌড়েরই জীবন। কাজ আর ক্লান্তি যেমন আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে রাখে একেকটা গোটা দিন-রাত!- পরদুপুরে ভাতের পরে চায়ের পথ-চাওয়া কাজের চেয়ারে তো বটেই, এমনকি থেমে থাকা সিএনজি স্কুটারের মধ্যেই দুই মিনিটের সিগন্যালেও ঘুমিয়ে যাই আমি! আর দূরপাল্লার যাত্রা যখন একা একা হয় মাঝেমধ্যে - কার-এ যাই কি বাস-এ - যাত্রা শুরুর পনেরো-বিশ মিনিটের মাথায় আমাকে থোড়াই আর জীবিত খুঁজে পাওয়া যায়!

ঞ.

(মি)ঞ! হ্যাঁ, বিড়ালও কিন্তু হাই তোলে। আর, মানুষও একটা হাই কোয়ালিটির লো ঘুম ঘুমায় কিন্তু, যেটার নামই দেয়া হয়েছে ‘বিড়ালঘুম’। ঘুমের আঞ্জাম-আয়োজনে শুয়ে-টুয়ে না-ই হ’তে পারে, নুয়ে ঝুঁকে কিংবা সোজাও বসার মধ্যে পাঁচ-ছয় মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য বিশেষ ঘুমের আবার বৈজ্ঞানিকভাবে আবিষ্কৃত বেশ কিছু উপকারও আছে। যেমন, শ্রান্তি অবসাদ কিংবা একঘেঁয়েমির মধ্যে হঠাতের এই ছোট্ট ঘুমের কুচিই আপনাকে এক ঝটকায় ক’রে দিয়ে যেতে পারে চনমনে আর আরো অনেকক্ষণের কাজকর্মের জন্য এক্কেবারে তরতাজা ফিট! এমনকি মস্তিষ্কের সাধারণ ফাংশনালিটিকেই রিচার্জ আর রিফ্রেশ ক’রে তার কার্যকারিতাকে গুণেমানে বাড়িয়ে দিতে পারে এই স্ট্র্যাটেজিক ঘুম। হ্যাঁ, পান্থ শোনো, চকিতে মাথার ব্লক খুলে দিতে ক্রিয়েটিভ-দের জন্য এই বিড়ালঘুম কিন্তু খুবই কার্যকর। :D

বিড়াল থেকে একটু উঠে কিংবা নেমে যদি এবার চ’লে আসি ব্যাঙের ঘুমে, তাহ’লে তো আমার চেনা কেউ কেউ খুব মজা পেয়ে টনক নেড়েচেড়ে বসছেন জানি, ভাবছেন- এই তো, ভাবগ্রস্ত (ব্যর্থ)আঁতেলপ্রয়াসী সাইফুল আকবর খান এইবার তার প্রিয় টপিক এবং টনিকে পৌঁছুলো! ব্যাঙের হাইবারনেশনের মতো আমার শীতনিদ্রাও আমাকে যথার্থই এপর্যন্ত বাঁচিয়ে এনেছে শত ঘোর প্রতিকূলতা আর চাপা দেয়া ভারি ভারি দেয়ালগুলোর ফোকল গলিয়ে। বাতাসে কি আশেপাশে গ্রীস্ম কি শীত যা-ই থাকুক, আমি ঘুমেই থাকি বেশিরভাগ সময়। কখনও শীতনিদ্রা যাই বেঁচে যাওয়ার জন্য পলায়নে, কখনও আবার সাময়িক স্ট্র্যাটেজিক ইচ্ছামৃত্যু হিসেবেই। সত্যিই, এত কম জেগে থাকি আমি!- আমার জীবনে কর্ম আর নির্বাণ কীভাবে কতোটুকু হবে, আমি জানি না।

ট.

টাকা খরচ ক’রে কতো মানুষ অঘুমের চিকিত্সা করায়! আমি জানি না কোন্ ডাক্তার আমাকে জাগিয়ে বা সারিয়ে তুলতে পারে এমন ঘোর এই ঘুমঘোর থেকে! ক্রিয়েটিভ-বিক্রিয়েটিভ এত প্রকারের এত বাজে এত বেশি এত ঘুম কেন আমার!

ওঠো ওঠো ওঠো বেওলা, সওদাগরের ঝি!
তোরে পাইলো কালনিদ্রায়, মোরে খাইলো কী?

টেবিলে মাথা দিয়ে, কাজে মাথা না দিয়ে, লিখতে লিখতেও কিংবা না লিখে, শুয়ে কিংবা না শুয়েই কতো আমি ঘুমাই! ঘুম আমার ভাঙতেই চায় না। রাতেরটাও না, কাজেরটাও না, জীবনেরটাও না।

ঠ.

ঠিক কে কখন কীভাবে কতোক্ষণ ঘুমায়, আর কেনই-বা সেভাবে ঘুমায়- এগুলো নিয়ে গবেষণা তো আগেও বলেছি এ লেখার কলেবরে নেই। তা না-ই থাকলো, তবু এটুকু আমাকে বলতে দিন এই ঘুমনামায়, যে- ঘুমের ধরন বা লক্ষণ দিয়ে অনেক কিছু বোঝা আর বুঝানো যায়। বেশি ঘুমানো, জেগে জেগে ঘুমানো, প’ড়ে প’ড়ে ঘুমানো, কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমানো, এমনকি কারো সাথে ঘুমানো- এ সবগুলোরই যেমন বিভিন্ন রকম অল্প-বিস্তর ভীষণ নির্দিষ্ট নোশন আছে কিছু। আবার, ঘুম নিয়েও কারো আছে নির্দিষ্ট ভিশন মিশন অবজেকটিভ পর্যন্ত! ঘুমের দোহাই লাগে- দয়া ক’রে ব’লেন না যে আপনি জানেন না ঘুমের বিষয়ে সঘোষিত-তবু-স্বীকৃত এক্সপার্ট আমাদের মহামতি মাহবুব লীলেনের কথা! বিশেষ বিশ্বস্ত সূত্রের সর্বশেষ খবরে জানা গ্যাছে- ঘুমের রীতিমতো পেটেন্ট বা কপিরাইট করার জন্য ঢুলুঢুলু চোখে ঘুমঘুম পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের লীলেন ভাই। এই মহতী ক্যাম্পেইনে উনার বহুল প্রচারিত একটা জনপ্রিয় স্লোগানই যে আছে- সেটাও শুনে ন্যান, যারা এখনও জানেন না। “ঘুমের স্বাধীনতা চাই”। এটা তাঁর অন্যতম স্বাক্ষরে পরিণত হয়েছে এরই মধ্যে। পিছে পিছে একটু আধটু ফেস্টুন লিখে টিখে হাত টাত তুলে ধুনে আমরাও কয়েকজন আছি তাঁর সাথে এই আন্দোলনের অন্দর-বাহির-ভূগর্ভে! কতো মাসের কতো স্বপ্নক্ষয়ী যুদ্ধে ঘুমের এই স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে- সে ধারণা অবশ্য আমার তো নেই-ই, লীলেন ভাইয়েরও আছে ব’লে আশাবাদী হ’তে পারছি না মোটেই।

ড.

ডাক্তাররা আপনাকে যেটা বলতে পারবেন ব’লে মনে করি না, সেটা হচ্ছে- শারীরবৃত্তের সাথে ঘোর সম্পর্কের বাইরেও ঘুমের আছে বিশেষ কিছু রোমান্টিক আবেদন, এমনকি আলোড়নও। নিজ কাঁধে ডেঞ্জার নিয়েই স্বীকার করছি - যেমন শুনেছি অন্যের কাছে, তেমন নিজেও দেখেছি পরখ ক’রে কিংবা শিকার হয়ে - অপোজিট জেন্ডারের ঘুম ঘুম চেহারা আর কণ্ঠ আমাদের কাছে শুধু রোমান্টিক নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে সেক্সি-ও লাগে অনেক ডেঞ্জারাসলি! আবার, তার চেয়েও সিরিয়াসলিডেঞ্জারাস- বাসে-টাসে কোনো পার্শ্ববর্তী অপরিচিতের মুখের ঘুমঘুম দেখে যখন বোঝা যায় বা মনে হয়- তিনি ঘুমটাকে এত বেশিই স্বাভাবিক বাস্তবতা হিসেবে নিয়েছেন নির্বিকার, যে জীবনেও তিনি দাঁত মেজে দ্যাখেন না কেমন লাগে, তখন অবশ্য অজান্তে মুহূর্তে নিজেরই মুখ উল্টে আসে আমার মতো আরো কোনো কোনো দর্শকেরই।

ঢ.

ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘুমের মেরিট-ডিমেরিটের এই যে কোয়ালিটেটিভ মোষ চরালাম নিজের খেয়ে, সবচেয়ে বড় কথা- ঘুম আর ঘুমহীনতার যৌথ অত্যাচারেও বহু কষ্টে টিকে থেকে এটা শেষ যে করতে পারছি, তার আরামে আজ রাতে ভালো ঘুম হওয়ার কথা আমার, অন্তত গত দু’রাতের চেয়ে ভালো হওয়া উচিত। সেই ঘুমের আগে আমার কোথাও কোথাও গিয়ে চা কিংবা ফ্রেশ জুস-টুস (এমনকি হ’তে পারে মুড়িও!) খেতে টেতে হবে। তাই, আমি এখন নিঃশব্দে ফুটে যাওয়ার ধান্ধা করি বরং। তবে, শেষের আগে আরেকটু কষ্ট দেবো আমার আপন-ব্লগারদেরকে। নিচের দুইটা গান একটু শোনেন দ্যাখেন।

[দুঃখিত। গানের অ্যাকটিভ লিংক এখানে পুনরুত্পাদন করতে পারছি না আপাতত। পরে কখনও আবার জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করবো।]

শুধু গান কবিতা আর প্রেমেই নয়। ঘুম যেহেতু বিভিন্নমাত্রিক এক বিশেষ অবস্থার নাম, বিষয় হিসেবে ঘুমের সম্ভাবনাও যেহেতু অপার, আমার দুঃখ দুঃখ বিশেষণগুলোকে স্থগিত ক’রে দিয়ে এই ঘুমের অর্থও হ’তে পারে অনেক সুললিত কিছু। সবশেষে, আমারও আর কয়েকটা টাট্কা পংক্তি একটু হজম করেন সেই আবদারে।

সব ঘুমেরই অন্য কোনো পাড়ে
জেগে থাকে অন্য কেউ বা কিছু,
চোখ বুজে যায় বিজলি কি আঁধারে!
কিংবা কোনো স্বপ্ন ডাকে পিছু।

যাই। গুডনাইট, গুড নেকস্টডে, অ্যান্ড অ্যাবাভ অল, গুড স্লিপ অল দ্য লাইফ!

zzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzzz........

(আদি পোস্টাইম @সচলায়তন: ২০০৯-০৪-২৯ ২০:১৫)

কোন মন্তব্য নেই: